আমরা জানি সংস্কৃতি স্থির বিষয় নয়। পরিবর্তন সংস্কৃতির ধর্ম। পৃথিবীর বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিতে ভিন্নতা থাকলেও সেখানে প্রতিনিয়ত সংযোজন ও বিয়োজন চলে। একসময় সংস্কৃতির পার্থক্য বা পরিবর্তনশীলতার মধ্যে আবার নতুন সংস্কৃতির পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটে। সংস্কৃতির এই পরিবর্তনশীলতার কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন:
সাংস্কৃতিক ব্যাপ্তি : সাধারণত দুইটি সমাজের সংস্কৃতি একে অপরের সংস্পর্শে এসে একে অপরকে প্রভাবিত করে। এই কাছে আসা যত বেশি দীর্ঘস্থায়ী হবে সংস্কৃতির আদান-প্রদান তত বেশি হবে। এর মাধ্যমে একে অপরের সংস্কৃতির কিছু না কিছু গ্রহণ করবে। সংস্কৃতির এই চলমান গতিধারা এবং এক সমাজ থেকে আরেক সমাজে সংস্কৃতির প্রসার লাভকে সাংস্কৃতিক ব্যাপ্তি বলে। অর্থাৎ সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক প্রসার বা ব্যাপ্তি ঘটে। বিশ্বায়নের ফলে এবং প্রযুক্তির উন্নতিতে সাংস্কৃতিক ব্যাপ্তি অনেক বেড়ে গেছে।
সাংস্কৃতায়ন : নিজ সংস্কৃতিকে অক্ষুণ্ণ রেখে অন্য কোনো সাংস্কৃতিক উপাদানকে নিজ সংস্কৃতির সাথে আত্মস্থ করার প্রক্রিয়াকে সাংস্কৃতায়ন বলা হয়। আমাদের দেশ বহুবার বহিরাগত শাসক দ্বারা শাসিত হওয়ায় এখানে সাংস্কৃতায়ন প্রবল। ভিন্ন সংস্কৃতির সংস্পর্শই সাংস্কৃতায়ন প্রক্রিয়ার কারণ বলে মনে করা হয়। যেমন : ইংরেজরা প্রায় দুইশ বছর আমাদের শাসক ছিলো বলে অনেক ইংরেজি শব্দ আমাদের ভাষায় মিশে গেছে।
সাংস্কৃতিক আত্তীকরণ : আত্তীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী অন্যের সংস্কৃতি আয়ত্ত করে। যেমন: মানুষ যখন কোনো নতুন সংস্কৃতি বা সাংস্কৃতিক পরিবেশে বসবাস করতে আসে তখন সেখানকার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ, চিন্তা-চেতনা, মূল্যবোধ এক কথায় সমগ্র জীবনধারার সাথে আত্তীকৃত হতে চেষ্টা করে। এভাবে একসময় তা আত্তীকরণ হয়ে যায়। যেমন: জীবিকার প্রয়োজনে, বৈবাহিক কারণে অথবা অন্য যেকোনো কারণে নিজ এলাকা থেকে স্থানান্তর হলে মানুষ ঐ এলাকার সংস্কৃতির সাথে নিজেকে আত্তীকরণ করার চেষ্টা করে।
সাংস্কৃতিক আদর্শ : প্রতিটি দেশ বা সমাজের রয়েছে নিজস্ব একটি সাংস্কৃতিক আদর্শ। সাংস্কৃতিক আদর্শ বলতে কোনো দেশ বা সমাজের মানুষের সংস্কৃতির ধরনকে বোঝায়। এগুলো হলো- আচার- আচরণ, খাদ্য, পোশাক, বিশ্বাস, ধর্মবিশ্বাস, লোককাহিনি, সংগীত, লোককলা ইত্যাদি। কোনো দেশ বা সমাজের সাংস্কৃতিক আদর্শের মাঝে ঐ দেশ বা সমাজের মানুষের জীবনপ্রণালি ও বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠে। এই আদর্শের কারণে সংস্কৃতিসমূহের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায় ।
প্রযুক্তি ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন : আধুনিক প্রযুক্তি বা বস্তুগত সংস্কৃতির দ্রুত পরিবর্তন ও উন্নয়ন সমাজে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে গোটা বিশ্ব এখন একটি বিশ্বপল্লিতে রূপান্তরিত হয়েছে। যার ফলে যোগাযোগ প্রক্রিয়া অনেক উন্নত হয়েছে। এখন ঘরে বসে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের খবর জানা যায়। এক সংস্কৃতি অন্য সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসছে। অনুন্নত সংস্কৃতি দ্রুত উন্নত সংস্কৃতির উপাদান গ্রহণ করছে। এভাবে প্রযুক্তি সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটাচ্ছে।